প্রকাশ :
২৪খবর বিডি: 'বরিশালের মুলাদী থেকে হলস্টেইন জাতের প্রায় ১ হাজার ৬০০ কেজি ওজনের একটি গরু গাবতলী পশুহাটে তোলেন সানাউল্ল্নাহ। ২০ লাখ টাকা দাম চাইছিলেন। কিন্তু ১২-১৩ লাখের বেশি কেউ দাম বলছেন না। ১৫ লাখের নিচে বিক্রি করলে ওই গরুতে তার লোকসান হবে। কিশোরগঞ্জ থেকে সাড়ে সতেরশ কেজির আরেকটি গরু এনেছিলেন আবুল কাশেম। সেটির দাম চাইছিলেন ২৫ লাখ টাকা। সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ১৫ লাখ। তাঁরও একই বক্তব্য। দুটি গরুর একটিও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বিক্রি হয়নি'।
'এ চিত্র কেবল সানাউল্লাহ ও আবুল কাশেমের ক্ষেত্রেই নয়। এবার কোরবানির পশুহাটে বিদেশি জাতের বড় গরুর চাহিদা তুলনামূলক কম। এ জন্য বড় গরুর বিক্রেতারা কিছুটা বিপাকে পড়েছেন। তবে মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা ব্যাপক। এ ধরনের গরু বিক্রেতারা মোটামুটি খুশিও। বিশেষ করে ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা দামের গরুগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। দাম তুলনামূলক বেশি বলে মনে করছেন ক্রেতারা। অবশ্য বিক্রেতারা বলছেন, ভুসি-খড়সহ সব পশুখাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে।'
-গাবতলী গরুর হাটে কিছু বড় গরু বিক্রি হয়েছে। সেগুলোর দাম ৪ থেকে ৭ লাখ টাকা। তবে হাট পরিচালনকারীরা বলছেন, বড় গরুর ক্রেতারাও আসতে শুরু করেছেন। এখন বড় গরুও বিক্রি হবে। পীরেরবাগ বাড়িমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সফিউল্লাহ বাবু গাবতলী হাট থেকে দুটি গরু কিনেছেন ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, গরু দুটি থেকে আনুমানিক ১০ মণ মাংস পাওয়া যাবে। দাম খুব একটা বেশি নয় বলে তার ধারণা।
-ধোলাইখাল ট্রাকস্ট্যান্ড পশুহাট ঘুরে দেখা যায়, গরুবোঝাই ট্রাকের কারণে রায়সাহেব বাজার থেকে দয়াগঞ্জ মোড়ের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ট্রাকে করে আরও পশু হাটে ঢুকছে। দুপুরে ধূপখোলা ট্রাকস্ট্যান্ডে কথা হয় চুয়াডাঙ্গার আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তারা চারজনে ২০টি গরু হাটে তুলেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে চারটি আর শুক্রবার সকাল ১১টার মধ্যে ছয়টি গরু বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে। শুক্রবার অনেকে পরিবার নিয়ে আসেন। পছন্দ হলেই গরু কিনেছেন।
-কিশোরগঞ্জ থেকে কাইয়ুম এনেছিলেন ১৩টি গরু। আনার সঙ্গে সঙ্গে দুটি গরু বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর ২০টি গরু এনেছিলেন। তবে বাজারে তেমন ক্রেতা না থাকায় পাঁচটি গরু ফেরত নিয়ে যান। এ বছর বাজার ভালো। এ হাটে ছোট-মাঝারি বড় সব সাইজের গরু আছে। ট্রাকস্ট্যান্ডে ছাগলের হাটের ইজারাদার সারোয়ার আলী পিন্টু বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষ করে ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর অঞ্চলের ছাগল এবার বেশি এসেছে হাটে। মাংসের কেজি অনুপাতে বিক্রি হচ্ছে ছাগল। ক্রেতা ও বিক্রেতারা সবাই খুশি ছাগলের দামে।
-কমলাপুর পশুহাটে পানি-কাঁদায় হাঁটা দায়। তারপরও দলবেঁধে হাটে ঢুকছেন ক্রেতারা। কেউবা স্কেল ইঞ্চি দিয়ে গরুর ওজন জানার চেষ্টা করছেন। কুষ্টিয়ার ইমদাদুলের ১৬টি গরুর চারটি দুপুরের মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। আজ শনিবারের মধ্যেই বিক্রি শেষ করে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নেবেন। তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর গরু কম। তবে ক্রেতার সংখ্যা বেশি। সরকারি কর্মকর্তা আলতাফ তাঁর ছোট ছেলে মোহতাসিম হোসেন আহনাফকে হাটে নিয়ে এসেছেন। দুটি গরু আর একটি খাসি নেবেন। কিন্তু দরদামে মিলছিল না। তিনি বলেন, এ বছর গরুর দাম অনেক। গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।
ঈদের শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে পশুহাটে কেনাবেচা,চাহিদা কম বড় গরুর
-মালিবাগ থেকে রিয়াজ হোসেন তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হাটে আসেন। তিনি বলেন, একটি ভেড়া ও একটি ছাগল কিনেছেন। দাম একটু বেশি। পছন্দ হলে আরেকটি গরু কিনতেন। আনোয়ার মিয়া পাবনা থেকে সাতটি গরুহাটে নামান। এর মধ্যে তিনটি বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর হাটে গরু কম। তবে দাম বেশি। পোস্তগোলা শ্মশানঘাট এলাকার হাটের ইজারাদার মঈন উদ্দিন চিশতী বলেন, এবার হাটে পর্যাপ্ত গরু-ছাগল এসেছে। দাম একটু বেশি।
'রাজধানীর আফতাবনগর ও মেরাদিয়া পশুহাট ঘুরে বড় গরুগুলোর আশপাশে ক্রেতাস্বল্পতা দেখা গেছে। বিক্রেতারা কিছুটা হতাশ। ১৫ মণ ওজনের 'বড় বাবু' নামে একটি গরু টাঙ্গাইল থেকে এনেছেন ফরিদ ব্যাপারী। ১২ লাখ টাকা দাম চান গরুটির। তিনি বলেন, এত বড় গরু এলাকায় বিক্রি করতে অসুবিধা হবে বলে ঢাকায় এনেছেন। এখানেও বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন 'রাজাবাবু' ও 'মাস্টারবাবু' নামের দুটির গরুর মালিক জামালপুরের হোসেন মিয়া। তিনি বলেন, অতীতে বড় গরু কিনতে অনেককেই হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখেছেন। এবারের চিত্র ভিন্ন। ক্রেতারা জানাচ্ছেন মানুষের ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও গত কয়েক বছরে সেই তুলনায় আয় বাড়েনি। এ কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে'।
-রাজধানীর ধোলাইখাল ট্রাকস্ট্যান্ড হাটে ভিন্ন ধরনের কয়েকটি হালকা গোলাপি রঙের মহিষ দেখা গেছে। মহিষগুলো হাটে তুলেছেন কেরানীগঞ্জের ইউশা এগ্রো অ্যান্ড ডেইরি ফার্ম ও মানিকগঞ্জের রাসেল ডেইরি ফার্ম। এ ফার্মের কর্মকর্তা আলমগীর জানান, এ ধরনের মহিষের জাতের নাম এলভিনো বা হোয়াইট বাফেলো। থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ভারতে এদের দেখা যায়। মহিষগুলো শংকর জাতের। এগুলোর প্রতিটি ওজন সাড়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার ১০০ কেজি। দাম চাওয়া হচ্ছে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ।